60%
ছাড়বিস্তারিত
নায়ক মহেন্দ্র ভট্টাচার্য অতিশয় দীন হয়ে সাহার্য্যের প্রার্থনায় পিতৃবন্ধু হালের উচ্চশ্রেণীর কর্তা উমেশবাবুর কাছে যায়। এককালে উমেশবাবুর কঠিন সময়ে মহেন্দ্রের পিতা ক্ষেত্র নাথ বাবু জীবন বাজি রেখে প্রাণ বাঁচিয়েছিল তাঁর। সেই দায়বদ্ধতা থেকে উমেশবাবু মহেন্দ্রকে সন্তানতূল্য জ্ঞ্যানে বাড়িতে আশ্রয় দেন। ভাতৃতুল্য বন্ধু প্রয়াত ক্ষেত্রনাথের পরিবারের জন্য কিছু করতে পারেন নায় এতকাল ভেবে আক্ষেপ করতে থাকলেন উমেশবাবু। তাইতো প্রতিমাসে মানিওর্ডার করে পঞ্চাশ টাকা পাঠাতে ভুল করতেন না। যদিও সেই টাকা গ্রহণে নিতান্তই অনীহা বোধ করে মহেন্দ্রের বড়ভাই শাস্ত্রজ্ঞ দেবেন্দ্র ভট্টাচার্য। নেহাত চোখদুটো অন্ধ হয়ে যাওয়া বাধ্য হয়েই অন্যের দান গ্রহন করতে হচ্ছে তাকে।অপরপক্ষে চাল চুলোহীন ঘরে বড় হওয়া মহেন্দ্র নিজেকে ঠিক মানিয়ে নিতে পারত না; হীনতায় ডুবে থাকত সারাক্ষণ । কিন্তু উমেশবাবুর পরমা সুন্দরী অষ্টাদশী তনয়া মাধুরী, গল্পের নায়িকা, কথার চেয়ে কাজ করে দেখানোয় যার স্বভাব; হয়ে উঠে মহেন্দ্রের একমাত্র অবলম্বন। একজন ভাল বন্ধু, একজন আলোর দিশারী, একজন আদর্শ পথ প্রদর্শক। বড়লোকের তথাকথিক সোসাইটিকে তোয়াক্কা না করে কিভাবে মানুষকে সম্মান করতে হয়, কিভাবে আতিশায্যের মধ্যেও ধর্মের পথ থেকে একচুল পরিমাণও বিচ্যতি না হওয়া যায় মাধুরী যেন তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। পরিবারে সবার ছোট হওয়ায় আদরটাও ছিল সবচেয়ে বেশী, বড় তিন ভাই অতিন, যতিন আর রতীণের যেন চোখের মনি। পরিবারে মাধুরীর কথাই যে শেষ কথা সেটা সবাই বোঝে এবং মানে। মাধুরীর সংসর্গ মহেন্দ্রকে পরিবর্তন করে তুলে। ধীরে ধীরে মহেন্দ্রও শিখতে থাকে বড়লোকের আদব কায়দা।মহেন্দ্র তাঁর স্বীয় গুণে কখন যে ধীরে ধীরে মাধুরীর মনে জায়গা করে নিয়েছে বুঝতেই পারল না। এরমধ্যে কলকাতার নামী পত্রিকায় লেখা লেখির পাশাপাশি একটা ছোটখাট কেরানীর চাকরিও জুটিয়েছিল মহেন্দ্র। গ্রামে তার পথ চেয়ে বসে থাকা হঠাত অন্ধ হয়ে যাওয়া দাদা দেবেন্দ্র, মাতৃতুল্য বৌদি অপর্না আর ছোট্ট দেবশিশু খোকনের জন্য পাঠাল জীবনের প্রথম অর্জনের চৌদ্দটি টাকা। এই চৌদ্দ টাকা যে অন্ধের কাছে দুনিয়ার সবচেয়ে মূল্যবান বস্তু প্রতীয়মান হয়েছিল সেটা সুদুর কলকাতায় বসে মহেন্দ্র ঠিকই অনুধাবন করতে পেরেছিল। প্রিয় খোকোনের কথা চিন্তা করতেই মুখখানা তার প্রশান্তিতে ভরে গেল।কলকাতার অলিতে গলিতে, পার্কে-রেস্তোরায় মহেন্দ্র মাধুরী যেন প্রেমের এক অনবধ্য উপাখ্যান সৃষ্টি করছিল দিনের পর দিন। একদিকে মহেন্দ্র যেমন মাধুরীর চোখে দেখেছিল মাতৃরুপের ছায়া, তেমনি ছোট্ট ভাইপো খোকন, যে অর্থাভাবে দুবেলা না খেয়ে থাকে তার জন্য মহেন্দ্রের যে মনোকষ্ট তা দেখে মোহিত হতে থাকে মাধুরী। দুই আত্মার তখন এক আত্মায় পরিণত হয়েছিল। কিন্তু মহেন্দ্রের মনে হয় এ বুঝি তার ছল, মনে হল মাধুরীকে সে ঠকাচ্ছে। সে বুঝতে পেরেছিল মাধুরী তাঁর প্রতি যেমন দুর্বল হয়ে পড়েছে তেমনি সে নিজেও নিজের অজান্তে মাধুরীর জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়ছে কিন্তু এতো সম্ভব নয় কিছুতেই। সে তো চেয়েছিল মাধুরী রাজরানি হোক, কিন্তু তার সাথে থাকলে এযে কখনোই সম্ভব হবে না । তাই তো একদিন কাউকে না জানিয়ে নিরুদ্দেশ হয়েছিল দক্ষিণে। মরণ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে একদিন মৃতুর কোলে মাথা নত করে মহেন্দ্র। আর ওদিকে মহেন্দ্রের অপেক্ষায় দিন, মাস, বছর… অপেক্ষা করতে থাকে মাধুরী। হয়ত কোনদিন আসবে মহেন্দ্র। তাঁদের পরিণতির সাক্ষী হতে থাকে এক এক করে নয় বছরে লেখা নয়টি নীল হলুদ খামে ভরা লাল কালিতে লেখা মাধুরীর চিঠিগুলো।
Reviews (0)
Get specific details about this product from customers who own it.
This product has no reviews yet. Be the first one to write a review.