50%
ছাড়বিস্তারিত
হুগলি ব্রাঞ্চ স্কুলের ত্রিরত্ন বলে পরিচিত ছিল জগদীশ, বনমালী এবং রাসবিহারী। স্কুল থেকে তাদের তিনজনের বাড়িই ছিল বহুদূরে, সেখান থেকে হেঁটে তারা আসতো স্কুলে। তিনজনের মধ্যে এতোটা গভীর বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল, স্কুলের পথের ন্যাড়া বটগাছকে সাক্ষী রেখে তারা শপথ করে বসে তিনজনের কেউ কখনো কারো থেকে আলাদা হবে না, কেউ জীবনে বিয়ে করবে না এবং তিনজনে টাকা রোজগার করে ভবিষ্যতে তা দিয়ে দেশের মঙ্গল করবে।
কিন্তু সময়ের স্রোতে সবকিছুর সাথে সাথে তাদের শপথের জোরও মলিন হয়ে যায়। বনমালী এবং রাসবিহারী ব্রাহ্মধর্ম গ্রহণ করে ব্রাহ্ম-পরিবারেই বিয়ের কাজ সম্পন্ন করে। কিন্তু জগদীশ তা না করে আগের জীবনে স্থায়ীভাবে থিতু হয়ে যায়, একসময় আইন পাশ করে অতঃপর এক ব্রাহ্মণকন্যাকে বিয়ে করে এলাহাবাদে গিয়ে সংসার পাতে। অন্যদিকে - ব্রাহ্মধর্মের অনুসারীদের চালচলনের প্রতি গ্রামের মানুষের বিতৃষ্ণার মুখে বনমালী গ্রাম ছেড়ে কলকাতায় গিয়ে বসবাস শুরু করেন ; আর রাসবিহারী রয়ে যায় গ্রামেই এবং বনমালীর বিষয়-আশয় দেখাশোনার ভার তার উপর পড়ে।
পঁচিশ বছর পরের কথা। তাদের সকলের বয়স হয়েছে বেশ। এরই মধ্যে স্ত্রী মারা গিয়েছে জগদীশের, এককালের তীক্ষ্ণ মেধাবী মানুষটি স্ত্রীর শোকে মদ্যপান করে নিজের স্বাস্থ্য ও সম্মান দু'টিই হারিয়ে নিজেও গত হয়েছেন। কেবল রয়েছে তার পুত্র নরেন। বাবার কারণে যে এখন সকলের কাছে এমনকি বাবার বাল্যবন্ধু রাসবিহারীর কাছেও চক্ষুশূল। কিন্তু বনমালী আজীবন স্নেহ করে গিয়েছেন নরেনকে। মৃত্যুশয্যায় মেয়ে বিজয়াকে তিনি বারবার বলে যান তার বাল্যকালের বন্ধুর স্মৃতির প্রতি যেন সবসময় তার মেয়ে শ্রদ্ধা বজায় রাখে এবং আভাস দিয়ে যান তার শেষ ইচ্ছে তার মেয়েটি যেন নরেনকে আপন করে নেয়।
এদিকে ছোটবেলা থেকে পরস্পরকে চেনা-জানার মাধ্যমে বিলাস তথা রাসবিহারীর ছেলেকে নিজের ভবিষ্যত স্বামী বলে মনে মনে মেনে নিয়েছিল বিজয়া। বিলাস এবং রাসবিহারীর মুখে শুনে তার নিজেরও নেতিবাচক ধারণা জন্মেছিল নরেনের ব্যাপারে। কিন্তু কলকাতা থেকে নিজের বিষয়-আশয় চোখে দেখার জন্য যখন সে গ্রামে গেলো কিছুদিনের জন্য, তখন চোখের সামনে নরেনকে দেখতে পেয়ে - পরবর্তীতে তার সাথে কিছুদিন আলাপের পর সে বুঝতে পারলো মানুষটিকে সে যা ভেবেছিল মোটেই তা নয়। হঠাৎ এক আচমকা ঝড়ের মতো সে দুর্বল হয়ে পড়লো মানুষটির প্রতি। অথচ রাসবিহারী ও তার ছেলে উঠেপড়ে লেগেছে বিজয়াকে হাত করার জন্য। আবার দিন-রাত বাবার শেষ ইচ্ছেটাও কানে বাজছে বিজয়ার।
Reviews (0)
Get specific details about this product from customers who own it.
This product has no reviews yet. Be the first one to write a review.